ঢাকা, মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪

উপকূলে চিংড়ি চাষ যেন গলার কাঁটা! 

আবুল হাসান, মোংলা থেকে

প্রকাশিত : ১৫:৩৮, ২৭ মে ২০২১

ধান বা কুটির শিল্প নয়, সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা উপকূলের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস্য সাদা সোনা খ্যাত চিংড়িসহ সাদা প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। এসব মাছ চাষ করেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ এ অঞ্চলের ৭০ শতাংশ মানুষের জীবিকা চলে। তবে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মোংলা উপকূলের এসব চিংড়ি চাষীরা।

জীবিকার ওপর এমনভাবে প্রভাব পড়ে, যেন তাদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে নতুন করে ‘ইয়াসে’র প্রভাবে ৬৮৫টি ঘেরের সবগুলোই ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, ঝড়ের আগে প্রচণ্ড তাপদাহে এখানকার চাষীদের কয়েক লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। এখন নতুন করে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভেসে গেছে উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৪৪৫টি, চাঁদপাইয়ে ১৪৪টি ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে ৮৬টিসহ চিংড়ি ও সাদা মাছের ৬৮৫টি ঘের। এসব খামারে কত টাকার মাছ ভেসে গেছে তার হিসাব শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে কথা হয় ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে। জয়মনি ঘোলের হরিদপ মণ্ডল এদিন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে কয়টা মাছ ছাড়িলাম, তাও বইন্যেই সব তলায় গেইছে’। 

কাইনমারি এলাকার দিলিপ কুমার বিশ্বাস ও তপন গাইন বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে এক দফা মরে পঁচে যাওয়াসহ এইবার ঝড়ে ঘেরের মাছ সব ভেসে গেছে। এখন কি করে বেঁচে থাকবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি’। 

ধারবাহিক দুর্যোগের কারণে এসব এলাকার চিংড়ি মাছ চাষের সাথে জড়িত কয়েক লাখ মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে উঠেছেন। 

মোংলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও চিংড়ি ব্যবসায়ী মোঃ আবু তাহের হাওলাদার বলেন, ‘চিংড়ি চাষের মৌসুমের শুরুতেই প্রান্তিক চাষিরা হোঁচট থেতে শুরু করেন। এপ্রিল-মে মাসে করোনার লগডাউনে হ্যাচারিগুলো বন্ধ থাকায় রেনু পোনার চরম সংকট দেখা দেয়। এছাড়া চাষিরা স্থানীয় প্রাকৃতিক চিংড়ি পোনাও আশানুরূপ পাননি। আবার ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতিতে ধানও নেই মাছও নেই’।

মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত আম্ফানে মোংলাসহ বাগেরহাট জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। সে সবের ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি এখানকার চাষিরা। এরপর আবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নতুন করে আরও মাছের ঘের তলিয়ে গেলো। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সরকারের উপরের দফতরে পাঠানো হবে, এরপর চাষিদের ক্ষতি পোষাতে সাধ্যমত চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি। 

তবে বুধবারের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখানকার চাষিদের রাত জেগে চিংড়ি ঘের পাহাড়া দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সব কিছু জোয়ারের পানিতে চোখের সামনে তলিয়ে গেছে। চড়া সুদের ঋণে আবদ্ধ থাকা তারা এখন কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে, কিভাবে জীবন বাঁচাবে তা তারা নিজেরাও জানে না!

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি